যে গমের বরকত আজো অব্যহত

যে গমের বরকত আজো অব্যহত

****যে গমের বরকত আজো অব্যহত***

হযরত খাজা মুহাম্মদ আবদুল মালেক চৌক রহ. কুরাইশি নিজেকে বকওয়াল বলতেন। অনেক বড়ো শায়খ ছিলেন। তিনি এ ঘটনা মসজিদে বসে অজুর সাথে শুনিয়েছিলেন। আর এ অধম মসজিদে বসে অজুর সাথে
শুনেছি। এখন মসজিদে বসে অজুর সাথে আপনাদের শোনাচ্ছি পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়ে। শব্দে একটু পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু মর্মে একটুও পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেছিলেন, আমি আমার শায়খের ছাগল চরাতাম আর আল্লাহ আল্লাহ করতাম। ছাগলগুলো নিজেরাও চরত আর আমিও ঘাস কেটে সেগুলো তাদের খাওয়াতাম।

workout-food-into

সন্ধ্যায় যখন ছাগলগুলো নিয়ে আসতাম, তখনো কিছু ঘাস আমি মাথায় করে আনতাম। আমার বন্ধুরা শায়েখের
মসজিদে বসতেন, আর আমি শায়খের ছাগল চরাতাম। একবার হযরত খাজা ফজল আলি কুরাইশির কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম হলো, তুমি আবদুল মালেককে খেলাফত দিয়ে দাও। আবদুল মালেক কুরাইশি রহ. বলেন, যখন আমাকে খেলাফত দেয়া হলো, তখন আমি অবাক হয়ে গেলাম যে, আমি তো এর উপযুক্ত নই। এক-দুই ঘণ্টা আমি অনবরত কাঁদতে থাকলাম। অন্যান্য খলিফাগণ আমাকে এ বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যে, আল্লাহ তায়ালা যখন একটি দায়িত্ব দিয়েছেন, তখন তা বহর করার শক্তিও দিবেন।

তিনি বলেন, আমি মনে মনে ইচ্ছা করলাম যে, আমি তো এর উপযুক্ত নই, তবুও যেহেতু হযরত আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি আর কাউকে সেটা দেয়ার মতো যোগ্যতা রাখি না, তাই
আমি কাউকে বাইয়াত করবো না। এভাবে হযরতের খেদমতে এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। একবার শীতমৌসুমে তিনি আগুন পোহাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি আমার দিকে গোস্মার সাথে তাকালেন। হযরতের এরকম দৃষ্টি দেখে আমার অবস্থা তো কাহিল, যেনো আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত সব ঠিক ঠাক আছে তো? তিনি বললেন, ‘এই মাত্র কাশফের মাধ্যমে আমি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছি। তিনি বললেন, আবদুল মালেককে বলো, সে যেনো তাকে দেয়া নিয়ামত মানুষের মধ্যে বণ্টন করে। তা নাহলে আল্লাহ তাঁর নিয়ামত ছিনিয়ে নেবেন।

এ আদেশ যেহেতু মাহবুবের পক্ষ থেকে এসেছে, তাই তুমি আর দেরি করো না। রাতের আধার শেষ
হওয়ার আগে আগে বিছানাপত্র নিয়ে বাড়িতে চলে যাও। সেখানে গিয়ে মানুষদেরকে আল্লাহ, আল্লাহ শিখাও।’ এরপর আমি অনবরত কাঁদতে লাগলাম। হযরত নিজেই আমার ছামানাপত্র এনে আমার মাথায় উঠিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যাও; বাড়িতে চলে যাও।’ আমি বললাম, ‘হযরত! আমি কোনো কাজের নই? এতো বছর জিকির-আজকারে কাটিয়ে দিয়েছি।

workout-food-into

দুনিয়ার কোনো কাজই শিখিনি। আমার জন্য আপনি রিযিকের দোয়া
করুন।’ ‘তিনি বললেন- إن الله مع الصابرين
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’
আমার আত্মীয়-স্বজনেরা আমার বিয়ের জন্য আগে থেকে আমার এক আত্মীয়ের মেয়ে নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। সুতরাং বাড়িতে আসতেই তারা আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেললেন। বিয়ে হয়ে গেলো। কিন্তু প্রায় সময়ই ঘরে খাবারের কোনো ব্যবস্থা থাকতো না। তবে আমার স্ত্রী ছিলো বেশ ধৈর্যশীল। সে বলতো, ‘আপনি গাছের পাতা নিয়ে আসুন, আমরা তা-ই খাবো।’ আমি তা-ই নিয়ে আসতাম। আর দু’জনে সেগুলো খেয়ে দিন কাটিয়ে দিতাম। একদিন আমার এক পীরভাই আমার বাড়িতে আসলেন। তিনি হযরতের খানকায় গিয়ে ছিলেন।

ওখান থেকে ফেরার সময় হযরত তাঁকে দশ কিলো ওজনের একটি গমের থলে আর একটি চিটি দিয়ে বলেছেন, এগুলো আবদুল মালেকের কাছে পৌছে দিও।’ তিনি দুপুরের সময় আমার বাড়িতে পৌছে দরজার কড়া নাড়লেন। আমি দরজা খুলে তাঁর সাথে কুশলাদি বিনিময় করলাম। হাতে গমের থলে দেখে আমি মনে করলাম, উনি হয়তো খানকায় যাবেন। খানকার জন্যই হয়তো এ গম নিয়ে আসছেন। এরপর আমি ঘরে গিয়ে আমার স্ত্রীকে বললাম, মেহমানের জন্য খানাপিনার কোনো ব্যবস্থা করা যায় কী?’ স্ত্রী বললো, ‘ঘরে তো খাবার কিছুই নেই ।

‘ তবে আমার স্ত্রী ছিলো বুদ্ধিমতী। সে বললো, ‘আপনি এক কাজ করুন, উনি খানকা শরিফের লঙ্গরখানার জন্য যে গম নিয়ে আসছেন, তার অনুমতি সাপেক্ষে সেখান থেকে কিছু গম নিয়ে আসুন। আমি পিষে
ত্রুটি বানিয়ে দিই। এতে শরমের কী আছে? গিয়ে বলে দেখুন।’ আমি গিয়ে তার অনুমতি নিয়ে সেখান থেকে কিছু গম নিয়ে রুটির ব্যবস্থা করলাম।

খাবার শেষে মেহমানকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। ঘুম থেকে উঠে তিনি আমাকে একটি চিঠি দিয়ে বললেন, ‘এটা হযরত দিয়েছেন।’ তখন বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার হলো। বুঝতে পারলাম, হযরত এ গম অধমের জন্যই পাঠিয়েছেন। চিঠিটি খুলে পড়লাম। তাতে লেখা আছে –’আবদুল মালেক! তুমি আল্লাহ, আল্লাহ করো এবং আল্লাহ,
আল্লাহ করাও। এ গমগুলো শক্ত কোনো বন্ধ পাত্রে রেখে দেবে। আর পাত্রের নিচে ছিদ্র করে সেখান থেকে গম বের করে খেতে থাকবে। এটা তোমার লঙ্গরখানার জন্য। নিচে লেখা ছিলো-
إن الله مع الصـابـريـن
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’
আমার স্ত্রী গমগুলো একটি শক্ত বন্ধ পাত্রে রেখে দিলো। ভালোভাবে ঢাকনা বন্ধ করে দিলো। আর নিচের দিক থেকে একটি ছিদ্র করে নিলো।

workout-food-into

প্রয়োজনমতো সেখান থেকে গম নিয়ে রুটি বানাতো। আলহামদুলিল্লাহ!
এখানো চল্লিশবছর পর্যন্ত এ গম থেকে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে। এখানো আমার খানকাতে দু’তিন শ’ মানুষ সবসময় থাকে। এ গম থেকেই সকলের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বছর শেষে হাজারের অধিক মানুষ হয়। তাদের খানাও সেই গম থেকে ব্যবস্থা করা হয়। চল্লিশ বছর ধরে এভাবেই সেই গম আমরা খেয়ে আসছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *