রসূলুল্লাহর নামায পদ্ধতি

রসূলুল্লাহর নামায পদ্ধতি

রসূলুল্লাহর নামায পদ্ধতি

কেবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো

রসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ফরয, সুন্নাত ও নফল নামায পড়তেন, তখন কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং অন্যদেরকেও কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতেন। তিনি ভুল নামায আদায়কারীকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তুমি যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে, তখন কেবলামুখী হয়ে তাকবীর বলবে।

তিনি সফরে নিজ সওয়ারীর উপর বেজোড় নফল নামায পড়তেন এবং সওয়ারী পূর্ব ও পশ্চিমে যে দিকেই যেত, সেদিকে মুখ করেই নামায আদায় করতেন।

এ বিষয়ে আল্লাহর কোরআন বলছে, এট অর্থ ঃ “তোমরা যেদিকেই মুখ করো, সে দিকেই আল্লাহ আছেন।

এছাড়াও তিনি সওয়ারীর উপর জোড় নফল নামাযও পড়তেন। তিনি যখন নামায পড়তেন, তখন সওয়ারীর উপর কেবলামুখী হয়ে বসতেন এবং তাকবীর বলতেন। তারপর সওয়ারী যেদিকেই যেত তিনি নামায অব্যাহত রাখতেন ।

তিনি সওয়ারীর উপর মাথার ইশারায় রুকু ও সিজদাহ দিতেন। তিনি রুকুর তুলনায় সিজদায় অধিকতর নীচু হতেন।” তিনি ফরয নামায পড়ার ইচ্ছা করলে সওয়ারী থেকে নীচে নেমে কেবলামুখী হয়ে নামায আদায় করতেন। কঠিন ভয়কালীন নামাযে তিনি নিজ উম্মতের জন্য দাঁড়িয়ে সওয়ারীর উপর, কেবলা কিংবা অকেবলামুখী হয়ে নামায আদায়ের সুন্নত চালু করে গেছেন।

১. বোখারী ও মুসলিম।

2. ।ঐ

৩. সূরা বাকারা, ১১৫ আয়াত।

৪. আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান।

৫. আহমদ, তিরমিযী।

৬. বোখারী, মুসলিম।

৭. বোখারী, মুসলিম।

রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন : ‘যখন তারা নামাযে এসে তখন তাকবীর বলবে ও মাথা দ্বারা ইশারা করবে। মিলিত রসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বলতেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যখানে কেবলা। হবে,

জাবের (রাঃ) বলেছেন : আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গে এক অভিযানে বের হই। তখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় আমরা কেবলা নির্ধারণের ব্যাপারে মতভেদ পোষণ করি। আমরা প্রত্যেকেই পৃথক পৃথকভাবে নামায আদায় করি। আমরা প্রত্যেকেই স্থানের পরিচিতির জন্য সামনে একটা দাগ কাটি। সকাল বেলায় আমরা যখন ঐ স্থান দেখি, তখন দেখতে পাই যে, আমরা কেবলার বিপরীত দিকে নামায পড়েছি। আমরা তা রসূলুল্লাহর কাছে বর্ণনা করি। তিনি আমাদেরকে পুনরায় নামায পড়ার আদেশ করেননি। বরং তিনি বলেন, তোমাদের নামায শুদ্ধ হয়েছে

রসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মাকদেসের দিকে মুখ করে নামায পড়েন। তখন কাবা শরীফকে কেবলা বানানো তার বাসনা ছিল। অথচ নীচের আয়াত নাযিল হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বায়তুল মাকদেসের দিকে ফিরেই নামায পড়েন। আয়াতটি হচ্ছে :

অর্থ : “আমরা আকাশের দিকে বারবার তোমার ফিরে তাকানোকে দেখছি। এখন আমরা তোমার মুখ সেই কেবলার দিকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি যা তুমি পছন্দ করো। সুতারাং মসজিদে হারামের দিকে মুখ ফিরাও।”

এ আয়াত নাযিলের পর তিনি কাবার দিকে মুখ করে নামায পড়া শুরু করেন। সকাল বেলায় কিছু লোক মসজিদে কুবায় নামায পড়াকালীন সময় একজন আগন্তুক বলেন, রাত্রে রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর কাবাকে কেবলা বানিয়ে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে কোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। তাই তোমরা কাবার দিকে মুখ ফিরাও। এ সময় তাদের মুখ ছিল সিরিয়াভিমুখী। তখন তারা কাবার দিকে ফিরে দাঁড়ান এবং ইমামও তাই করেন।”

৮. বায়হাকী।

৯. তিরমিযী।

১০. দারু কুতনী, হাকেম, বায়হাকী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও তাবরানী।

১১. বোখারী, মুসলিম, আহমদ, তাবরানী।

কেয়াম (দাঁড়ানো)

রসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহর নিম্নোক্ত আদেশের ভিত্তিতে ফরয ও নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়তেন আল্লাহ বলেন : ত

অর্থ ঃ “আল্লাহর সামনে অনুগত ও বিনীত হয়ে দাঁড়াও।”১২

তিনি সফরে নফল ও সুন্নত নামায সওয়ারীর উপর বসে আদায় করতেন। তিনি যুদ্ধকালীন ভয়ের নামাযে উম্মাহর জন্য পায়ের উপর দাঁড়িয়ে কিংবা সওয়ারীর উপর বসে আদায়ের নিয়ম চালু করে গেছেন। আল্লাহ বলেছেন ঃ

অর্থ ঃ “তোমরা নামাযসমূহের পূর্ণ হেফাযত করো। বিশেষ করে মধ্যবর্তী ও উত্তম-উৎকৃষ্ট নামায। আল্লাহর সামনে অনুগত সেবকের ন্যায় দাঁড়াও। ভয়ের সময় পদাতিক কিংবা আরোহী অবস্থাতেই নামায পড়। তারপর নিরাপত্তা ফিরে আসলে আল্লাহকে সেই নিয়মে ডাক যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।” ১৩

রসূলুল্লাহ (সঃ) মৃত্যুকালীন তাঁর রোগে বসে বসে নামায পড়েছেন। ১৪ আরেকবার অসুস্থ হয়ে তিনি বসে নামায পড়েছেন এবং লোকেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়েন। তারপর তিনি তাদেরকে বসার জন্য ইঙ্গিত দেন, তারা সবাই বসে পড়েন। নামায শেষে তিনি বলেন, তোমরা প্রথমে যা করেছিলে, তা পারস্য ও রোম সম্রাটদের নীতি। তারা বসে থাকে আর লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকে। তোমরা এরূপ করো না। অনুসরণের জন্যই তোমাদের ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি রুকু করলে তোমরা রুকু করবে, তিনি রুকু থেকে উঠলে তোমরা উঠবে এবং তিনি বসে নামায পড়লে তোমরাও সবাই বসে নামায পড়বে। ১৫

১২. বাকারা : ২৩৮ আয়াত।

১৩. বাকার ঃ ২৩৮-২৩৯ আয়াত।

১৪. মুসলিম।

১০ মুসলিম।

অসুস্থ লোকের বসে নামায পড়া

ইমরান বিন হোসাইন (রাঃ) বলেছেন, আমার ছিল অর্শ রোগ। আমি রসূলুল্লাহ (সঃ)-কে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়। যদি দাঁড়াতে সক্ষম না হও, তাহলে বসে নামায পড়। যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে শুয়ে এক পাশে ফিরে নামায পড়বে।১৬

তিনি আরো বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বসে নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়া উত্তম, বসে নামায পড়লে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার অর্ধেক সওয়াব পাওয়া যায় এবং শুইয়ে নামায পড়লে বসে নামায পড়ার অর্ধেক সওয়াব পাওয়া যায়। ” এখানে রোগীর নামায সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) কিছু রোগীর কাছে গেলেন যারা বসে বসে নামায আদায় করছিলেন। তিনি বলেন, বসে নামায পড়লে।দাঁড়িয়ে নামায পড়ার অর্ধেক সওয়াব। ১৮

রসূলুল্লাহ (সঃ) এক রোগীকে দেখতে যান। রোগীটি বালিশের উপর নামায পড়ছিলেন। তিনি বালিশটি ফেলে দেন। তারপর রোগীটি নামায পড়ার জন্য একটি কাঠ নেন। তিনি এবারও কাঠটি ফেলে দেন এবং বলেন, সক্ষম হলে মাটির উপর নামায পড়। নচেত ইশারা দ্বারা নামায পড় এবং রুকুর তুলনায় সাজদায় অধিকতর ঝুঁকে পড়। ১৯

নৌকায় নামায

রসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নৌকায় নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকলে দাঁড়িয়ে নামায পড়। ,

রসূলুল্লাহ (সঃ) শেষ বয়সে একটি লাঠির উপর ভর দিয়ে নামায পড়েছেন। ২১

১৬. বোখারী, আবু দাউদ, আহমদ। খাত্তাবী বলেছেন, ইমরানের হাদীসে ফরয নামায সম্পর্কে বলা হয়েছে কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে পড়তে পারলে ভাল। অন্যথায় বসে পড়া জায়েয থাকলেও তাতে সওয়াব অর্ধেক পাওয়া যাবে।

১৭ বোখারী, আবু দাউদ, আহমদ।

১৮. আহমদ ও ইবনে মাজাহ-সনদ বিশুদ্ধ।

১৯. তাবরানী, বাযযার, বায়হাকী সনদ বিশুদ্ধ।

২০. বায্যার, দরু কুতনী, হাকেম।

২১. আবু দাউদ, হাকেম।

জুতা  সহকারে নামায পড়া ওঅনুরুপ করার আদেশ

রসূলুল্লাহ (সঃ) রাত্রে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামায পড়তেন। তিনি দীর্ঘ সময় বসেও নামায পড়তেন। তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়লে দাঁড়িয়ে রুকু দিতেন এবং বসে নামায পড়লে বসে রুকু দিতেন। ২২ কখনও তিনি বসে বসে নামায পড়লে কেরাআতও বসে বসেই পড়তেন।

কিন্তু যখন ৩০/৪০ আয়াত বাকী থাকত, তখন তিনি দাঁড়াতেন। তারপর রুকু ও সাজদা করতেন। দ্বিতীয় রাকাআতেও তিনি অনুরূপ করতেন। ২৩

তিনি শেষ বয়সে বসে নফল নামায পড়েছেন। ইন্তিকালের এক বছর আগে তিনি বসে নফল নামায পড়েন। ২৪

রসূলুল্লাহ (সঃ) আসন-পিড়ি হয়ে এক পায়ের উপর অন্য পা আড়াআড়িভাবে স্থাপন করে বসতেন । ইংরেজিতে একে Cross-Legged বলে। ২৫

জুতা সহকারে নামায পড়া ও অনুরূপ করার আদেশ

রসূলুল্লাহ (সঃ) কখনও জুতা পায়ে এবং কখনও খালি পায়ে নামায পড়তেন। তিনি নিজ উম্মাহর জন্যও অনুরূপ করাকে বৈধ করে গেছেন।

তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ নামায পড়লে সে যেন জুতা পরে থাকে কিংবা দু’পায়ের মাঝখানে তা খুলে রাখে। জুতা দিয়ে কাউকে যেন কষ্ট না দেয়। ২৭

তিনি কখনও জুতা সহকারে নামায পড়ার বিষয়ে তাকীদ দিতেন। তিনি বলেছেন ঃ তোমরা ইহুদীদের বিরোধিতা করো, তারা জুতা ও চামড়ার মোযায় নামায পড়ে না। ২৮

কখনও তিনি নামাযের মধ্যেই দু’পায়ের জুতা খুলে নামায অব্যাহত রাখতেন। এ মর্মে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন ঃ                                           একদিন রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে নিয়ে নামায পড়েন। তিনি নামাযে জুতা খুলে বামদিকে রাখেন। তা দেখে লোকেরাও জুতা খুলে ফেলল। তিনি নামায শেষে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন জুতা খুলে

২২. মুসলিম, আবু দাউদ।

২৩. বোখারী, মুসলিম।

২৪. মুসলিম, আহমদ।

২৫. নাসাঈ, ইবনে শোযাইমাহ, হাকেম।

২৬, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ। ইমাম তাহাবী বলেছেন, এটি মোতাওয়াতের হাদীস।

২৭. আবু দাউদ, বাযযার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *