রাত যখন ২.৩০টা

photo-1499613868175-318b7a818f31

রাত যখন ২.৩০টা

একটি ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা

১৯৯৯ সালের ঘটনা। ঘটনাটা ঘটে আমাদের প্রিয় নারায়নগঞ্জ এ। ২০ বছর আগে নারায়নগঞ্জ শহর এমনটা ছিলো না, আমরা সবায় তা যানি। ঘটনা টা ঘটে আনােয়ারা বেগম নামের এক গৃহবধূর সাথে। আনোয়ারার বাড়িটা ছিলো গ্রাম এর মাঝামাঝি।

একদিন রাত ১ টা বেজে গেলো ‘আনোয়ারা’র স্বামী সিরাজ মিয়া বাড়ি ফেরে না। বাহিরে ছিলো খুব ঝড়। আনোয়ারা ২ মেয়েকে নিয়ে খুব ভয়ে ছিলো কারণ আনোয়ারা যানতো ঝড়ের সময় ঘড়ের পিছনে বটগাছটা যেনো জীবন্ত প্রানী হয়ে ওঠে। হঠাৎ,,,,কে যেনো দরজাটা টোকা দিলো। আনোয়ারা কাপা কাপা গলায় বললো,,

আনোয়ারাঃ কে?

সিরাজ মিয়াঃ আমি দরজা খোলো

আনোয়ারা দরজাটা তারাতারি করে খুললো

আনোয়ারাঃ এতো দেরি হলো যে আপনার? আপনি তো যানেন ঝড় হলেই আমার ভয় হয়।

সিরাজ মিয়াঃ আর বলো না, রাস্তার অবস্থা অনেক খারাপ দোকান বন্ধ করবো এমন সময় দোকান এর চালটা উড়ে গেলো।

আনোয়ারাঃ ঠিকাছে ঠিকাছে তারাতারি হাত মুখ ধুয়ে আসো,,, আমি খাবার দেই।

সিরাজ মিয়াঃ মুক্তা, মনি ঘুমিয়ে পরেছে( মুক্তা আর মনি সিরাজ এর আদরের দুই কণ্যা)
আনোয়ারাঃ হ্যা, আপনার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমালো। তারপর আনোয়ারা আর সিরাজ মিয়া খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরলো। হঠাৎ বাহিরে ঝড় না থাকলেও হালকা ঠান্ডা বাতাস রয়েছে। আনোয়ারের ঘড়ের পিছনেই বটগাছ টা।

আনোয়ারা অস্তির হয়ে রয়েছে। রাত তখন ২.০০ ‘আনোয়ারা’র বাড়িটা ছিলো টিনের উপরে চাল। হঠাৎ করে ‘আনোয়ারা’র চোখটা ঘড়ের দরজার দিকে গেলো। দরজাটার নিচে অনেকটাই ফাঁকা। বটগাছটা এমন ভাবে ধুলছে মনে হচ্ছে ঘরের টিনটা এবার ভেঙেই ফেলবে। আনোয়ার এক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দেখতে পেলো দুটি ছোট ছোট পায়ে একটা বাচ্চা হেটে গেলো।

resize

প্রথমে আনোয়ারা ভয় পায় না মনে করে পাশের ঘরের পাখির মেয়ে হয় তো ( পাখি আনোয়ারার খালাতো বোন। ‘আনোয়ারা’র বাড়িতেই ভাড়া নিয়ে থাকে)। হঠাৎ ‘আনোয়ারা’র মনে পড়ে পাখির মেয়ে যদি হয় তবে পাখির ঘরের দরজার তো কোন শব্দ পেলাম না।

আর পাখির ও তো কোন শব্দ নেই। এই ভাবতেই ‘আনোয়ারা’র গা শিউরে ওঠে। আনোয়ারা তারাতারি সিরাজকে ডাকে।
আনোয়ারাঃ এই যে শোনেন, ওঠেন না দেখেন না বাহিরে দরজার সামনে কে যেনো আছে।
সিরাজ মিয়াঃ তুমি ঘুমাও, অনেক রাত হইছে।
কাঁচা ঘুম তো তাই সিরাজ তেমন পাত্তা দিলো না আনোয়ারাকে।কিন্তু ‘আনোয়ারা’র তো ঘুম আর আসবেও না। আনোয়ারা আসতে আসতে দরজা খুলে কিন্তু সত্য বাহিরে তো কেও ছিলো না।

‘আনোয়ারা’ বাতরুমে যাবে। বাহিরে অনেক অন্ধকার তারপর ও ভয়ে ভয়ে বাতরুমের দিকে যায়। বটগাছটা এমন ভাবে ধুলছে মনে হয় যেনো গাছটা মাটি থেকে শিকর উঠে আসবে। আনোয়ারা বাতরুমে যায় হঠাৎ বাতরুমের চালে কে যেনো হাটে যায়।আনোয়ারা ভয়ে ভয়ে বলে।
আনোয়ারাঃ কে,,,, কে চালের উপরে।
বলার সাথে সাথে একটা মেয়ের কান্নার শব্দ,,,,, উউউউউ করে ঘুগরায় ঘুগয়ার কাদে। আনোয়ারা ভয়ে বাতরুম থেকে বের হয় না। আনোয়ারা দোয়া পরতে লাগলো। প

রতে পরতে হঠাৎ কান্নাটা থেমে গেলো। আনোয়ারা ভয়ে ভয়ে বাতরুমের দরজাটা খুললো। এবার তারাতারি ঘরে যেতে নিলো তখনি তার সানে এক অদ্ভুত ছায়া দেখতে পেলো। ছায়াটা ছিলো বিশাল। উপরে তাকিয়ে দেখে বাড়ির দক্ষিণ দিকে এক পা আর বটগাছের উপরে এক পা দিয়ে এক অদ্ভুত ছায়া দারিয়ে আছে।

আনোয়ারা তখনই সাথে সাথে বেহুস হয়ে যায়। ভোর ৫ টা বাজে আনোয়ারার স্বামী তাকে ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু ‘আনোয়ারা’র আর গেন ফিরে না। সিরাজ মিয়া তারাতারি বাসায় হুজুর আনে। হুজুর পানি পড়া দিলে। কিছুক্ষণ পর ‘আনোয়ারা’র গেন ফিরলো। কিন্তু তার এতো জ্বর ছিলো যে সে কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিলো না।

মুক্তা আর মনিই মার অনেক খেয়াল রাখে। মুক্তার বয়স ১৩ বছর আর মনির বয়স ১০ বছর। দিন শেষ হয়ে রাত হলো এবার রাত ১.৩০ এ সিরাজ মিয়া বিছানায় তাকিয়ে দেখে আনোয়ারা বিছানায় নেই।

সিরাজ আর তার মেয়েরা আনোয়ারাকে খুজতে খুজতে বাহিরে গেলো কিন্তু আনোয়ারাকে খুজে পাচ্ছে না। সিরাজ খুজতে খুজতে বাড়ির পিছে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। দেখে অদ্ভুত ভাবে আনোয়ারা বটগাছের নিচে বসে আছে। এমন ভাবে আনোয়ারাকে সিরাজ কোন দিন দেখেনি। সিরাজ মিয়া আনোয়ারা কে বললো,,,,

সিরাজ মিয়াঃ আনোয়ারা তুমি এখানে কি করছো আর তোমার এই অবস্থা কেন?
কিন্তু আনোয়ারা কিছুই বলছে না। কি যেনো বলছে বিরবির করে।

মুক্তা আর মনি ভয়ে এক কোণ দারিয়ে আছে। সিরাজ এতো চেষ্টা করছে কিন্তু কোনও ভাবে আনোয়ারাকে ঘড়ে নিতে পারছে না। আনোয়ারাকে ওঠাতে সিরাজ যত চেষ্টা করছে ততই সিরাজ এর হাত ভারি হয়ে যায়। হঠাৎ সিরাজ এর মনে পড়ে হুজুরের পানি পড়ার কথা। তখন রাত ২.৩০ টা বাজে।

এতো রাত এ তো হুজুরকেও ডাকা সম্ভব না। হুজুরের পানিটা আনোয়ারার গায়ে দূর থেকে মারলো। সাথে সাথে আনোয়ারা গেন হারায়। সিরাজ তারাতারি আনোয়ারাকে ঘড়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আনোয়ারার গেন ফিরে না। সিরাজ আবার হুজুরকে নিয়ে আসলো। হুজুর আনোয়ারকে দেখে আবাক হয়ে বলে এইটা তো কঠিন একটা বেপার। হুজুর বলে ,,,,
হুজুরঃ সিরাজ তোমার বাড়ির
পেছনের ডটগাছটা কত বছর ধরে আছে তুমি যানো?
সিরাজ মিয়াঃ হুজুর আমার জন্মের আগে থেকে এই গাছটা এইখানে আছে।
হুজুরঃ এইখানে এমন এক শক্তি আছে। আনোয়ারা সেই শক্তির সামনে পরে গেছে। তার চলা ফেরার সময় আনোয়ারা সামনে পড়ে যায়। এখন সে আনোয়ার এর দেহে বাস করতে চায়।

সিরাজ মিয়াঃ হুজুর কিছু করেন আমার মেয়ে দুইটা এতিম হয়ে যাইবো।
হুজুর বললোঃ এই বটগাছটা এখন কাটাও যাবে না কারণ গাছটাতে সে এক যুগ এর বেশি বাস করছে।
সিরাজ মিয়াঃ তাহলে এখন কি করবো হুজুর?

হুজুরঃ এই তাবিজটা আনোয়ারের গলায় পরায় দাও। আমি আগে দেখি সে কি চায়।

এই বলে হুজুর চলে যায়। সিরাজ মিয়া আনোয়ারার জ্বর কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জ্বর কমে না। এই করতে করতে আবার রাত হয়। কিন্তু সিরাজ আজ আর ঘুমায় না কারণ যদি আজও আনোয়ারাকে বাহিরে নিয়ে যায়।

বসে থাকতে থাকতে সিরাজ মিয়া হটাৎ ঘুমিয়ে পরে । ২.৩০ টা বাজে সিরাজ এর ঘুম ভাঙে। বিছানায় তাকিয়ে দেখে আনোয়ারা বিছানায় নাই। হঠাৎ চালের উপর ধুমধাম শব্দ সিরাজ মিয়া তারাতারি বাহিরে গিয়ে দেখে আনোয়ারা বটগাছের ডালে বসে আছে।

সে এক ভয়ংকর দৃশ্য সিরাজ দোয়া পড়া শুরু করলো। মুক্তা আর মনি তারাতারি পাখিকে ডেকে আনে,,,, পাখি তারাতারি হুজুরকে নিয়ে আসে। হুজুর এর বাসায় গিয়ে দেখে,,,,

হুজুর তারাতারি বের হয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছে।
পাখিঃ হুজুর হুজুর কোথায় যাচ্ছেন? তারাতারি আপার কাছে বাড়ি চলেন। আপার অবস্থা ভালো না।
হুজুরঃ আমি তোমার আপার বাড়ির যাইতাছি তারাতারি চলো।

হুজুর আর পাখি তারাতারি যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তারা বার বার একই রাস্তায় এসে পরছে।
পাখিঃ হুজুর কি হইতাছে আমরা তো বার বার একই জায়গায় এসে পরছি।

হুজুরঃ আমাদের সময় নষ্ট করার চেষ্টা করছে। দেরি হলে আনোয়ারাকে আর বাচানো যাবে না।
এই কথা বলে হুজুর তার চুল থেকে একটা চুল ছিরে যেখানে দারিয়ে ছিলো সেখানে মাটিতে পুতে দিলো । তারপর তারা আবার হাটতে লাগলো।

এবার তারা বাড়িতে গিয়ে পৌছালো। বাড়িতে গিয়ে দেখে আনোয়ারাকে গাছের উপরে ঝুলনতো অবস্থায় রেখেছে।
সিরাজ মিয়াঃ হুজুর হুজুর কিছু করেন। আনোয়ারাকে ঠিক করে দেন।

হুজুরঃ গাছের নিচে ১ হাত মাঠির নিচে একটা মাটির চুরি আছে আর একটা চুরি আনোয়ারার কাছে আছে যার কারণে সে আনোয়ারাকে নিয়ে যেতে চায়।

সিরাজ মিয়াঃ কি করতে হবে বলে হুজুর?
হুজুরঃ আনোয়ারা চুরি টা কোথায় রাখছে তারাতারি খুজে আনো।

পাখি, সিরাজ, মুক্তা আর মনি তারতারি খুজতে লাগলো। খুজতে খুজতে আনোয়ারার জামা কাপরের নিচে একটা শাখার মতো সর্ন্যা দিয়ে বোনা একটা অসাধারণ চুরি।

সিরাজ তারাতারি চুরিটা নিয়ে হুজুর এর কাছে যায়। হুজুর চুরিটাকে ৪টা ভাগে ভাগ করল। সাথে সাথে এক ভয়ংকর শব্দ করে উঠলো।৷ আর আনোয়ারাকে নিচে ফেলে দিলো।

কিন্তু আনোয়ারাকে তখন ও কষ্ট দিচ্ছিলো। আনোয়ারার হাত পিছনে নিয়ে গেছে। তারপর হুজুর চুরিটা পুরিয়ে ফেললো।
হুজুরঃ সিরাজ তারাতারি যাও বটগাছটার ১ হাত নিচে আর একটা চুরি আছে ওইটা নিয়ে আসো।
সিরাজ তারাতারি বটগাছের নিচের চুরিটা নিতে গেলো কিন্তু সিরাজ এর শরীর অবস এর মতো হয়ে যায় কিন্তু তারপরও সিরাজ মাটি থেকে চুরিটা বের করে হুজুর এর কাছে নিয়ে যায়।

হুজুর চুরি টাকে ৪ টুকরা করে এবং পুরিয়ে ফেলে। তারপর হঠাৎ পরিবেশ টা নিষচুপ হয়ে যায়। তারপর আনোয়ারাকে নিয়ে ঘরে যায়। তারপর হুজুরের অনুমতি নিয়ে গাছটা সিরাজ মিয়া কেটে ফেলে।

২ সাপ্তাহ আনোয়ারা অনেক অসুস্থ ছিলো। ১ মাস এর মধ্যে আনোয়ারা আসতে আসতে সাভাবিক হয়ে ওঠে।

আমাদের গল্প গুলো ভালো লাগলে কমেন্স করে জানাবেন কেমন হলো….


One thought on “রাত যখন ২.৩০টা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *