সাহু সেজদা পাট ১

সাহু সেজদা পাট ১

১.মাসআলা : নামাজের মধ্যে যতগুলো ওয়াজিব রয়েছে তার একটি বা কয়েকটি যদি ভুল হয়ে ছুটে যায়, তবে তার (ক্ষতিপূরণের জন্য) সাহু সেজদা করা ওয়াজিব। এতে (ওয়াজিব ছুটে যাওয়ায় নামাজের যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল সাহু সেজদার দ্বারা তা পূরণ হয়ে যাবে এবং) নামাজ ঠিক হয়ে যাবে, যদি সাহু সেজদা না করে, তবে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে ।

maxresdefault-8

২. মাসআলা : যদি নামাজের কোনো ফরজ ভুলে ছুটে যায় (বা কোনো ওয়াজিব ইচ্ছাপূর্বক ছেড়ে দেয়, তবে তার ক্ষতিপূরণের কোনো উপায় নেই,) সাহু সেজদার দ্বারা নামাজ ঠিক হবে না, নামাজ পুনরায় পড়তে হবে ।

৩.মাসআলা : সাহু সেজদা করার নিয়ম হলো- শেষ রাকাতে তাশাহহুদ পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাবে এবং আল্লাহু আকবার বলে নিয়ম মতো দুটি সেজদা করবে, তারপর তাশাহহুদ, দরূদ এবং দোয়া সব পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে ।

৪. মাসআলা : যদি কেউ ভুলে ডান দিকে সালাম না ফিরিয়ে (শুধু তাশাহহুদ পড়ে এমন কি দরূদ ও দোয়া ইত্যাদি পড়ে) সাহু সেজদা করে, তবুও সাহু সেজদা আদায় হয়ে যাবে এবং নামাজ ঠিক হবে ।

৫. মাসআলা : ভুলবশত যদি কেউ দুই রুকূ করে ফেলে বা তিন সেজদা করে ফেলে তবে সাহু সেজদা করা ওয়াজিব হবে।

image

৬. মাসআলা : যদি কেউ ভুলবশত সূরা ফাতেহা না পড়ে শুধু সূরা পড়ে বা আগে সূরা পড়ে তারপর সূরা ফাতেহা পড়ে, তবে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

৭. মাসআলা : ফরজ নামাজের মধ্যে প্রথম দুই রাকাতে যদি সূরা মিলাতে ভুলে যায়, তবে শেষের দুই রাকাতে সূরা মিলাবে এবং সাহু সেজদা করবে, যদি প্রথম দুই রাকাতের কোনো এক রাকাতে সূরা মিলাতে ভুলে যায়, তবে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা মিলাবে এবং সাহু সেজদা করবে যদি প্রথম দুই রাকাতেও সূরা মিলাতে ভুলে যায় এবং শেষের দুই রাকাতেও স্মরণ না হয় তাশাহহুদ পড়ার সময় স্মরণ হয়, তবে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সেজদা করবে, তাতেই নামাজ ঠিক হয়ে যাবে ।

৮. মাসআলা : (বিতর) সুন্নত ও নফল নামাজের সব রাকাতে সূরা মিলানো ওয়াজিব, যদি কেউ কোনো রাকাতে ভুলে সূরা না মিলায়, তবে তার সাহু সেজদা করতে হবে।

৯. মাসআলা : কেউ সূরা ফাতেহা (বা অন্য কোনো সূরা) পড়ে চিন্তা করতে লাগল যে, এর পর কোন সূরা (বা কোন আয়াত) পড়বে, এরূপ চিন্তা করতে করতে যদি তার তিনবার সুবহানাল্লাহ’ পড়া যায় পরিমাণ সময় বিনা পড়ায় অতিবাহিত হয়, তবে তার সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে । (কিন্তু যদি চুপ করে না থেকে কোনো আয়াত বার বার পড়তে থাকে, তাপরপর নিজে নিজেই মনে আসে বা কোনো মুক্তাদির লোকমা দ্বারা স্মরণ হয়, তবে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে না।)

১০. মাসআলা : কেউ শেষ রাকাতে তাশাহহুদ পড়ে সন্দেহের কারণে চুপ করে বসে চিন্তা করতে লাগল যে, এটা তৃতীয় রাকাত না চতুর্থ রাকাত? কতক্ষণ চিন্তা করে স্থির করল যে, এটা চতুর্থ রাকাত, তারপর সালাম ফিরালো (বা তৃতীয় রাকাত স্থির করে দাঁড়িয়ে আর এক রাকাত পড়তে প্রস্তুত হলো) কিন্তু এ চিন্তার সে এতক্ষণ চুপ করে রয়েছে, যতক্ষণে তিনবার সুবহানাল্লাহ পড়া যেত, তবে তার সাহু সেজদা করতে হবে।

১১. মাসআলা : যদি কেউ সূরা ফাতেহা পড়ে সূরা মিলিয়ে ভুলে কিছু চিন্তা করতে থাকেএবং সেই চিন্তায় তিনবার সুবহানাল্লাহ পড়া যায় পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, (বাকারো যদি রুকুর মধ্যে গিয়ে স্মরণ হয় যে, সূরা মিলাতে ভুলে গেছে, তারপর রুকু হতে উঠে সূরা মিলায়, তবে তার আবার রুকূ করতে হবে।) এ অবস্থায় সাহু সেজদা করতে হবে।

১২. মাসআলা : এরূপ যদি কেউ কোনো সূরা পড়তে পড়তে আটকে যায়, এবং চুপ করে দাঁড়িয়ে তিন তাসবীহ পরিমাণ চিন্তা করে, বা দ্বিতীয় বা চতুর্থ রাকাতে তাশাহহুদ পড়তে বসে তা না পড়ে চিন্তা করে তিন তাসবীহ পরিমাণ দেরি করে, বা রুকূ হতে উঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে থাকে এবং এ জন্য তিন তাসবীহ পরিমাণ দেরি হয়, বা প্রথম সেজদা হতে উঠে বসে চিন্তা করতে থাকে এবং সেজন্য দ্বিতীয় সেজদায় যেতে তিন তাসবীহ পরিমাণ দেরি হয়ে যায়, তবে এসব অবস্থায় সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে। মোটকথা, ওয়াজিব তরক হলে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয়, তদ্রূপ ভুলে বা চিন্তা করার কারণে যদি কোনো ফরজ বা ওয়াজিব আদায় করতে তিন তাসবীহ পরিমাণ দেরি হয়ে যায়, তবুও সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

১৩. মাসআলা : তিন বা চার রাকাত ফরজ নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদ পড়তে বসে যদি কেউ ভুলে তাশাহহুদ দুই বার পড়ে ফেলে, বা তাশাহহুদ শেষ করে  (আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন) পর্যন্ত বা আরো বেশি দরূদ পড়ে ফেলে, তারপর স্মরণ হওয়ায় দাঁড়িয়ে গেল, তবে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে। এর কম পড়লে ওয়াজিব হবে না।

image

১৪. মাসআলা : সুন্নত ও নফল নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের পর দরূদ পড়াও জায়েজ আছে। কাজেই নফলে দরূদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে না, কিন্তু তাশাহহুদ দুবার পড়লে নফলের মধ্যেও সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

১৫. মাসআলা : তাশাহহুদ পড়তে বসে যদি ভুলে অন্যকিছু ( যেমন সুবহানাকা, দোয়া কুনুত, সূরা ফাতেহা) পড়ে, তবে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

১৬. মাসআলা : নামাজের নিয়ত বেঁধে কেউ যদি ভুলে (সুবহানাকা) পড়ার পরিবর্তে দোয়া কুনূত (বা তাশাহহুদ) পড়ে তাতে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে না। এরূপে যদি কেউ ফরজ নামাজের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার স্থলে তাশাহহুদ বা সুবহানাকা বা অন্য কিছু (যেমন অন্য সূরা মিলায়) পড়ে, তাতেও সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে না।

১৭. মাসআলা : তিন বা চার রাকাতি (ফরজ) নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে (বসা ওয়াজিব । কিন্তু যদি কেউ) বসতে ভুলে তৃতীয় রাকতের জন্য দাঁড়াতে উদ্যত হয়, এবং শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হওয়ার পূর্বে বসে পড়ে, তবে সাহু সেজদা করতে হবে না, কিন্তু যদি শরীরের নিম্নার্থ সোজা হয়ে যায়, তবে আর বসবে না, দাঁড়িয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাত পড়বে এবং শেষ বৈঠকে সাহু সেজদা করবে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর বসে তাশাহহুদ পড়লে গুনাহগার হবে কিন্তু নামাজ হয়ে যাবে এবং সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

১৮. মাসআলা : কেউ যদি চতুর্থ রাকাতের পর বসতে ভুলে দাঁড়াতে উদ্যত হয়, সে শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হওয়ার পূর্বে স্মরণ আসলে বসে পড়বে এবং তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ে সালাম ফিরাবে, সাহু সেজদা করতে হবে না। আর যদি সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে স্মরণ আসে, তবুও বসে তাশাহহুদ পড়তে হবে, এমনকি সূরা ফাতেহার পর কিংবা রুকূ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *