সুতরাহ না যে জিনিস নামায ভঙ্গ করে
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেন, নামাযীর সামনে সুত্রাহ না থাকলে ঋতুবতী মহিলার অতিক্রম কিংবা গাধা ও কাল কুকুরের অতিক্রমের কারণে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। আবু যর জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসূল! লাল কুকুরের তুলনায় কাল কুকুরের বিষয়টি এমন কেন? রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, কাল কুকুর শয়তান।
কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়া
রসূলুল্লাহ (সঃ) কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না।
নিয়্যত
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ‘সকল আমল নিয়্যতের সাথে জড়িত।সকল ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়্যত করে।
তাকবীর
রসূলুল্লাহ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামায শুরু করতেন। তিনি ভুল নামায আদায়কারী ব্যক্তিকেও অনুরূপ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি তাকে বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি নামায ওযূ শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু না করলে তা সম্পন্ন হয় না’ (সহীহ সনদ সহকারে তাবারানী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।)
রসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বলেছেন, নামাযের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন। তাকবীর দ্বারা নামাযের বাইরের বৈধ কাজগুলোকে নামাযে হারাম করা হয় এবং সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাযের বাইরের বৈধ কাজগুলো হালাল করা হয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, হাকেম, আল্লামা যাহাবী এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলেছেন)
তিনি তাকবীর বড়ো করে উচ্চারণ করতেন, পেছনের লোকেরাও তা শুনতে পেত। (আহমদ, হাকেম এবং আল্লামা যাহাবী এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন)
তিনি যখন অসুস্থ অবস্থায় নামায পড়ান, তখন আবু বকর (রাঃ) তাঁর
তাকবীরের শব্দ বড়ো করে লোকদেরকে শুনান। (মুসলিম ও নাসাঈ)
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ইমাম যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলেন,
তখন তোমরাও “আল্লাহু আকবার’ বল
দু’হাত তোলা (রফে’ ইয়াদাইন)
রসূলুল্লাহ (সঃ) কখনও তাকবীরে তাহরীমার সময়, ৭ কখনও তাকবীরের পরে এবং কখনও তাকবীরের আগে দু’হাত তুলতেন
তিনি আঙ্গুল লম্বা করে হাত তুলতেন, তা বেশি ফাঁক করতেন না। এবং মিলিয়েও রাখতেন না। তিনি দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন। মাঝে-মধ্যে কানের লতি পর্যন্ত হাত তুলতেন। বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
রসূলুল্লাহ (সঃ) বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন ৬৩ এবং বলতেন, আমাদের নবীগণকে ইফতার দ্রুত করা, সেহরী বিলম্বে খাওয়া এবং নামাযে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে
একবার তিনি এক নামায পড়া ব্যক্তির পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন যে, সে ডান হাতের উপর বাম হাত রেখেছে। তিনি তার হাত পৃথক করে দিয়ে তার ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে দেন।
বুকে হাত রাখা
তিনি বাম হাতের পিঠ ও কবযার উপর ডান হাত রাখতেন” এবং এরূপ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ দেন।
কখনও তিনি বাম হাতকে ডান হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরতেন। (নাসাঈ ও দারু কুতনী-সনদ সহীহ হাদীস থেকে বুঝা যায় হাতের উপর হাত রাখা কিংবা আঁকড়ে ধরা উভয়টিই সুন্নত। তবে হানাফী মাযহাবের কিছু লোক দু’টো বিষয়কে এক সাথে করা উত্তম বলেছেন। কিন্তু এটা বেদআত। তারা বলেছেন, বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে ডান হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে বাম হাতের কব্জি আঁকড়ে ধরতে হবে এবং অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বিছিয়ে দিতে হবে।
রসূলুল্লাহ (সঃ) দু’হাত বুকের উপর রেখে নামায পড়তেন। তিনি কোমরের উপর হাত রেখে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। কোমর বলতে কোমরের হাড় বুঝানো হয়েছে। এর উপর হাত রাখতে রসূলুল্লাহ (সঃ) নিষেধ করেছেন।
সাজদার স্থানের প্রতি নযর রাখা ও বিনয়ী হওয়া
রসূলুল্লাহ (সঃ) নামায পড়ার সময় মাথা নীচু করতেন এবং দৃষ্টি যমীনের উপর রাখতেন। তিনি যখন কাবা শরীফের ভেতর ঢুকেন,তখন তাঁর দৃষ্টি সাজদার জায়গা ছাড়া আর কোনো দিকে নিবদ্ধ ছিল না,যে পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে বের হন ততক্ষন।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঘরে এমন কোনো জিনিস থাকা উচিত নয়,যা নামাযীর মনকে ব্যস্ত রাখতে পারে তেমন জিনিস।
তিনি নামাযে আকাশের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন। শুধু তাই নয়, তাকীদ সহকারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হয় লোকেরা আসমানের দিকে তাকানো বন্ধ করবে,আর না হয় তাদের চোখ আর ফিরে আসবে না।’ অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, আর না হয় তাদের চোখ কেড়ে নেয়া হবে।
অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘তোমরা যখন নামায পড়বে, তখন এদিক-ওদিক তাকাবে না। কারণ, আল্লাহ নিজ চেহারা বান্দার চেহারার দিকে নিবন্ধ রাখেন যতোক্ষণ না বান্দা এদিক-ওদিক তাকায় । এদিক সেদিক তাকানোর বিষয়ে তিনি আরো বলেছেন যে এটা হচ্ছে বান্দার নামাযে শয়তানের ছোবল।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, নামাযে আল্লাহর দৃষ্টি সে পর্যন্ত বান্দার দিকে তাকে যে পর্যন্ত বান্দা এদিক-সেদিক না তাকায়। যখন সে এদিক- ওদিক তাকানোর জন্য মুখ ফিরায়, আল্লাহও নিজ মুখ ফিরিয়ে নেন।
রসূলুল্লাহ (সঃ) নামাযে তিনটি কাজ নিষেধ করেছেন। প্রথম হচ্ছে দু’ সাজদার মাঝখানে সোজা হয়ে না বসে মোরগের মতো ঠোকর দেয়া (অর্থাৎ সাজদা করা)। দ্বিতীয় হচ্ছে, কুকুরের মতো বসা এবং তৃতীয় হচ্ছে, শিয়ালের মতো এদিক-ওদিক তাকানো।
তিনি আরো বলেছেন, মৃত্যুপথ যাত্রীর শেষ নামাযের মতো মনোযোগ সহকারে নামায পড় এবং মনে করো যে, তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তাহলে তিনি অবশ্যি তোমাকে দেখেন।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ফরয নামায উপস্থিত হলে কোনো ব্যক্তি যদি ভালভাবে ওযূ করে, বিনয় (খুশু’) সহকারে নামায পড়ে এবং ভালভাবে রুকু করে, তাহলে তা তার সগীরা গুনাহর ক্ষতিপূরণ (কাফ্ফারা) হবে যে পর্যন্ত সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। এভাবেই যুগের পর যুগ চলতে থাকবে।
রসূলুল্লাহ (সঃ) চিহ্ন বিশিষ্ট কাল পশমী কাপড়ে নামায পড়েন এবং কাপড়ের চিহ্নের প্রতি একবার নযর করেন। নামায শেষ হলে তিনি বলেন, আমার এ কাপড়টি আবু জাহামের কাছে নিয়ে যাও এবং তার চিহ্নবিহীন মোটা কাপড়টি নিয়ে আস।
কেননা, এ কাপড়টি আমাকে নামায থেকে অন্যমনস্ক করে দিয়েছিল। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আমি নামাযে কাপড়ের চিহ্নের দিকে নযর করি যা আমাকে প্রায় ফেতনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছিল।
আয়েশা (রাঃ)-এর একটি কাপড়ে ছবি ছিল এবং ছোট একটি ঘরে টানানো ছিল। রসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ দিকে মুখ করেই নামায পড়তেন। তিনি বললেন, আয়েশা, ওটি আমার সামনে থেকে সরিয়ে নাও। নামাযে কাপড়ের ছবিটির প্রতি আমার দৃষ্টি যায়।
রসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বলেছেন, খাবার উপস্থিত হলে কোনো নামায নেই এবং পেশাব-পায়খানা আটকিয়ে রেখেও কোনো নামায নেই। নামাযে বিনয়ের স্বার্থে এ দু’টো বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।