স্বাস্থ্যের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া চলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।প্রতিদিন প্রায় সব ধরনের কাজে আমাদের পানি প্রয়োজন।এছাড়া আমরা সারাদিন যতসব খাবার খাই এরমধ্যে পানি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একমাএ পানিতেই ক্যালরি,ফ্যাট, শর্করা ও চিনি মুক্ত। পানিতে কোন পুষ্টি নেই তবে এটি জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
মানব শরীরে পানির প্রয়োজনীয়তা-
আমাদের শরীরে রক্তের ৮৩ ভাগ,হাড়ে ২২ ভাগ,মস্তিষ্কের ৭৪ ভাগ,পেশিতে ৭৫ ভাগ পানি থাকে,অর্থাৎ আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই রয়েছে পানি।শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ -পতঙ্গগুলো সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্যও পানি প্রয়োজন।আমরা যথেষ্ট পরিমাণে পানি না পান করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গাছের গোড়ায় পানি না দিলে যেমন গাছ শুকিয়ে যায় তেমনি মানবদেহে পানি পান না করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়। পানির অভাবে আমাদের শরীরের পুষ্টি সরবরাহ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়।শরীরে প্রতিটি কাজেই পানির গুরুত্ব অপরিসীম। শরীরকে সচল রাখা ও শারীরিক ফিটনেস অর্জনে খাদ্যতালিকা প্রচুর পানি থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় পানি পান না করলে শরীরে যেসব সমস্যা দেখা যায় –
পানি পান না করলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়।প্রয়োজনীয় পানি পানের অভাবে অনেক অনেক রকম সমস্যা যেমন – পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যা, শরীরের টকিন জমা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। পিপাসা অবস্থায় পানি খেলে তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।শারীরিক ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীরে শক্তি ফিরে আসে।
পানি রক্তে ও কোষে অক্সিজেন ও অনান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এছাড়া সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় পানি পানে। পানি শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। পানির অভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পানি হজম শক্তি বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। আমাদের শরীরে ঠিক ভাবে খাবার হজম হওয়ার জন্য প্রচুর পানির দরকার। তাই আঁশ জাতীয় খাবারের পাশাপাশি, প্রচুর পানিও পান করতে হবে। পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। পানি ঠিক মতো পান না করলে শরীর সব পানি শুষে নেয়, এতে কোলন শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিক মতো নির্গত হয় না। পানি কিডনির পাথর হওয়া থেকে বাঁচায় কারণ, পানি ইউরিনের লবন ও খনিজ ভেঙ্গে দেয়, ফলে কিডনিতে পাথর হয় না। ব্রেইনের ৮৫% হচ্ছে পানি। একটু পর পর পানি পান করলে তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে শরীরের অনেক উপকার হয়। পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ কমে তাই আমরা সমসময় বলি পানির উপর নাম জিবন।
প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করতে হবে তা দেহের উচ্চতা ও কাজের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, পুষ্টিবিদেরা বলেন দৈনিক অন্তত ৮ গ্লাস পানীয় পান করতে। তার মানে সব ধরনের পানীয় ও পানি সহ দৈনিক অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে ও নিয়মিত পানি পান করে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে।
মেট্রিক পদ্ধতিতে কেজিতে দেহের ওজনকে ত্রিশ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফলের পরিমাণ অনুযায়ী পানি পান করতে হবে। অর্থাৎ আপনার ওজন ৭০ কেজি হলে (৭০/৩০=২.৩) ২.৩ লিটার পানি পান করতে হবে অর্থাৎ প্রতিদিন আট গ্লাসের অধিক পানি পান করা বাঞ্ছনীয় এবং তা প্রতিদিন করা দরকার।
বিশুদ্ধ পানি কী?
বিশুদ্ধ পানির অপর নাম সুস্থ্যজীবন।শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য সুষম খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে। খাদ্যের ছয়টি উপাদান-এর মধ্যে একমাত্র পানিই হচ্ছে ক্যালোরি বিহীন খাদ্য উপাদান। যা আমাদের শরীরে ক্যালরির মাত্রা ও পুষ্টির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মময় জীবন যাপনের জন্য ক্যালরি বিহীন খাদ্য উপাদানটি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে প্রত্যেকের। শরীরে ইন্টারনাল অর্গানগুলোর সুস্থ ও সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে তাই পানি ফুটিয়ে খাবার প্রয়োজন ।
সুস্বাস্থ্য এবং রূপচর্চার পানির উপকারিতা –
পানি আমাদের দৈনিন্দ কাজে প্রয়োজনীয়।আমাদের সব কাজেই পানি প্রায় প্রয়োজন হয়।
এছাড়া মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য, সুস্থ ত্বক, ঝলমলে চুল আর উজ্জ্বল চেহারাও যে ব্যক্তির পানি পানের অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। আর এ বিষয়ে এখনো অনেকেই সচেতন নন। তাই আজ সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সৌন্দর্যের জন্যও পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা পাঠকদের সামনে সেটা তুলে ধরতেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস থাকছে আপনার দেহের যত্ন।
প্রতিটি কোষ থেকে শুরু করে ত্বক, পেশি, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ- সম্পূর্ণ শরীরের শতকরা প্রায় ৫৫-৭৫ ভাগ যে পানি দ্বারা গঠিত, শরীরকে টিকিয়ে রাখতে সেই পানি কতটা জরুরী তা বলাই বাহুল্য। অন্যান্য অঙ্গগুলোর মতো আমাদের ত্বকও অসংখ্য কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষগুলোর নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে দরকার হয় পানির। এখান থেকেই শুরু ত্বকের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা। ত্বকের অত্যাবশ্যকীয় আর্দ্রতা ধরে রাখতে আর কোষগুলোতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতে প্রয়োজন পানির। পানিই ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে আবার জীবিত করে, সেই সাথে ত্বককে দান করে স্থিতিস্থাপকতা। এভাবেই দেহে থাকা পর্যাপ্ত পানি আপনাকে সময়ের আগে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। তাই বয়সের ছাপ, ত্বকের কুঁচকানো ভাব রুখতে বিভিন্ন প্রসাধনী আর চিকিৎসার প্রলোভনে যখন বাজার সয়লাব, তখন নিশ্চিন্তে বলা যায়, বিশুদ্ধ পানিই এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড়ো সমাধান।