হযরত আবু বকর, হযরত ইবনে যুবাইর ও হযরত আলী (রাযিঃ) ও অন্যান্যদের নামাযের অবস্থা

image

হযরত আবু বকর, হযরত ইবনে যুবাইর ও হযরত আলী (রাযিঃ) ও অন্যান্যদের নামাযের অবস্থা

মুজাহিদ (রহঃ) হযরত আবু বকর ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) এর অবস্থা বর্ণনা করেন যে, যখন তারা নামাজে দারাইতেন তখন এইরূপ মনে হইত যেন একটি কাষ্ঠখন্ড মাটিতে গাড়া রহিয়াছে। অর্থাৎ, কোন প্রকার নড়াচড়া করিতেন না। ( তারীখুল খোলাফা)

ওলামায়ে কেরাম লিখিয়াছেন, হযরত ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) হইতে নামাজ শিখিয়াছেন আর হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে অর্থাৎ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামাজ পড়িতেন ঠিক সেভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) নামাজ পড়িতেন। আর একই ভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) নামাজ পরিতেন। ছাবেত (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) এর নামাজ এমন হইত যেন কোন স্থানে একটি কাঠ পুতিয়া রাখা হইয়াছে।

এক ব্যক্তি বলেন, হযরত ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) যখন সিজদা করিতেন তখন এত দীর্ঘ এবং এত শান্ত ও অবিচল অবস্থায় সেজদা করিতেন যে, তাহার পিঠে পাখি আসিয়া বসিয়া যাইতো। কখনও এত দীর্ঘ রুকু করিতেন যে, সমস্ত রাত্রি সকাল পর্যন্ত রুকুতেই কাটাইয়া দিতেন। কখনও সেজদা এত দীর্ঘ হইত যে, সারা রাত্রি কাটিয়া যাইত। যখন হযরত ইবনে যুবাইরের সংগে যুদ্ধ চলিতেছিল তখন একবার একটি গোলা আসিয়া মসজিদের দেওয়ালের একটি অংশ উরাইয়া লইয়া গেল। যাহা তাহার দাঁড়ি এবং গলদেশের মধ্য দিয়া অতিক্রম করিয়া গেল। এতদসত্তেও না তিনি বিচলিত হইলেন না রুকু সেজদা সংক্ষেপ করিলেন।

একবার তিনি নামাজরত ছিলেন। তাহার ছেলে হাশেম নিকটেই ঘুমাইতেছিল। ছাদ হইতে একটি সাপ পড়িয়া তাহার শরিরে জরাইয়া গেল। সে চিৎকার করিলে বাড়ীর সমস্ত লোকজন আসিল এবং হ গোল শুরু হইয়া গেল। অতঃপর সাপটি মারিয়া ফেলা হইল কিন্তু হযরত ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) একাগ্রচিত্তে নামাজ পরিতে থাকিলেন। সালাম ফিরাইয়া বলেতে লাগিলেন কিছু শোরগোল শুনিতে পাইলাম কি হইয়াছিল? স্ত্রী বলিলেন, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন, ছেলে তো মারাই যাইতেছিল আর আপনার কোন খররই নাই! তিনি বলিতে লাগিলেন, তোমার সর্বনাশ হউক! নামাজের মধ্যে অন্যদিকে মনোযোগ দিলে কি উহা নামাজ থাকিত ?

হযরত ওমর (রাযিঃ) কে জীবনের শেষ সময়ে যখন খঞ্জর মারা হইল যাহার ফলে তিনি ইন্তেকাল করিলেন তখন সারাক্ষন রক্তক্ষরণ হইত। অধিকাংশ সময় বেহুশও হইয়া যাইতেন। কিন্তু এই অবস্থাতেও যখন নামাজের ব্যাপারে সতর্ক করা হইত তখন ঐ অবস্থায় নামাজ আদায় করিয়া নিতেন। তিনি বলিতেন, ইসলামে ঐ ব্যক্তির কোন অংশ নাই যে নামাজ ছাড়িয়া দেয়। হযরত উছমান (রাযিঃ) সারারাত্র জাগিতেন, এক রাকাতে পুর্ণ কুরআন শরীফ খতম করিতেন।

হযরত আলী (রাযিঃ) এর অভ্যাস ছিল, যখন নামাজর ওয়াক্ত হইত তখন তাহার শরীরে কম্পন আসিয়া যাইত এবং চেহারা বিবর্ণ হইয়া যাইত। কেহ ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, সেই আমানত আদায়ের সময় হইয়াছে যাহা আল্লাহ তায়ালা আসমান- যমীন এবং পাহাড়- পর্বতের উপর অবতীর্ণ করিয়াছিলেন কিন্তু উহারা এই আমানত গ্রহন করিতে অক্ষমতা প্রকাশ করিয়াছে আর আমি উহা গ্রহণ করিয়াছি।

wpid-2015-04-30-00-23-59

খলফ ইবনে আইয়ুব (রহঃ) কে কেহ জিজ্ঞাসা করিল, নামাজের সময় আপনাকে মাছি বিরক্ত করেনা?? উত্তরে তিনি বলিলেন, ফাসেক লোকরে হুকুমতের বেত্তাঘাত সহ্য করে এবং কোন প্রকার নড়াচড়া করে না বরং গর্ব করে, আর নিজের ধৈর্য ও সবরের বাহাদুরী দেখায় যে, আমাকে এতগুলো বেতাঘাত করা হইয়াছে আমি একটুও নড়ি নাই। আর আমি আপন রবের সামনে দন্ডায়মান হইয়াছি আর সামান্য মাছির কারণে নড়াচড়া করিব????

মুসলিম ইবনে ইয়াসার (রহঃ) যখন নামাজের জন্য দাড়াইতেন তখন ঘরের লোকজনদের বলিতেন, তোমরা কথাবার্তা বলিতে থাক, তোমাদের কথাবার্তায় আমার কোন খবরই থাকিবে না। একবার তিনি বসরার জামে মসজিদে নামাজ আদায় করিতেছিলেন। মসজিদের একটি অংশ ধসিয়া পড়িল। লোকজন দৌড়াইয়া সেখানে জমা হইল। শোরগোল হইল কিন্তু তিনি কিছুই টের পাইলেন না।

হাতেম আসাম্ম (রহঃ) এর নিকট কেহ তাহার নামাজের অবস্থা জিজ্ঞাসা করিল। তিনি বলিতে লাগিলেন, যখন নামাজের সময় হয় তখন অজু করিয়া নামাজের যায়গায় যাইয়া কিছুক্ষন বসি যাহাতে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শান্ত হইয়া যায়। অতঃপর নামাজের জন্য দাড়াউয়া যাই। এই ধ্যান করি যে, কাবা শরীফ আমার সামনে, পুলসিরাত আমার পায়ের নিচে, ডান দিকে জান্নাত, বাম দিকে জাহান্নাম, আর মালাকুল-মাউত আমার পিছনে দাঁড়ানো। আর মনে করি যে, ইহা আমার জীবনের শেষ নামাজ। অতঃপর পূর্ণ একাগ্রতার সহিত নামাজ পড়ি। অতঃপর আশা ও ভয়ের মাঝে থাকি, কারণ জানিনা আমার নামাজ কবুল হইল কিনা।।।।।।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *