হরমোন সমস্যা: নারীদেহে পুরুষ হরমোন বেশি হলে যেসব সমস্যা হয়ে থাকে
নারীদেহে এন্ড্রোজেনের অথবা পুরুষ যৌন হরমোন আধিক্যের কারণে যে সমস্যা দেখা দেয় মেডিকেল ভাষায় সেটিকে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বলা হয়ে থাকে। বালিকা ও নারীদের প্রজননক্ষম সময়টাতে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয় । বাংলাদেশে এ রোগের হার প্রায় ২৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (ডা. শাহজাদা সেলিম) ।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের প্রভাবে নারীদের দেহে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। যেমন- ক. অনিয়মিত ঋতুস্রাব l খ. অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তস্রাব গ. মুখে ও শরীরে মধ্যে অত্যধিক লোম (পুরুষালি) ঘ. মুখে ব্রণ ও শরীরের অন্যান্য অংশে ।
সাথে আরও কিছু শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে -যেমন তলপেটে ব্যথা, মকমলের মতো কালো ত্বক ( ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায় ),ও বন্ধ্যত্ব । রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক । এদের অনেকেই দৈহিক স্থূ’লতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে , নাকডাকা ও ঘুমের সময় হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া , সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও জরায়ু ক্যান্সারেরও ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে ।
জিনগত ভাবে ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া , খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা সাথে ঝুঁকিপূর্ণ খাবার খাওয়া ইত্যাদি এ রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় অনেক । পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে নারীর ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয় ।
যার পেছনে রয়েছে পিটুইটারি গ্রন্থির অতিরিক্ত মাত্রায় এলএইচ (LH) নিঃস্বরণ ও দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্সের উপস্থিতিই কারণ ।
এর নাম পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হওয়ার প্রধান কারণ হল ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন বয়সি , বিভিন্ন আকারের , বিভিন্ন সংখ্যার সিস্ট থাকবে তাই ।
রোগ যেভাবে শনাক্ত করবেন
নিম্নলিখিত ক্রাইটেরিয়ার যে কোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক থাকতে হবে –
নারীদেহে অতিরিক্ত মাত্রায় এন্ড্রোজেন হরমোন উপস্থিতি।
১.অনিয়মিত মাসিক ।
২.ডিম্বাশয়ে মধ্যে সিস্ট ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
৩.সিরাম টেস্টোস্টেরন , এলিস , এফএসএইচ।
৪.পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম।
৫.ওজিটিটি।
চিকিৎসা
আমাদের জীবনযাত্রা ব্যবস্থাপনা : চিকিৎসার শুরুতেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে আমাদের । রোগীর দৈহিক ওজন কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছতে সাহায্য করবে , এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে যাতে করে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্স কমে যাওয়ার ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। আদর্শ জীবনযাপন ব্যবস্থাপনা রোগীর হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাবে অনেক ।
এ ধরনের রোগীদের খাদ্য তালিকায় শর্করার আধিক্য কম পরিমাণ থাকবে , শাকসবজি ( আলু বাদে ), রঙিন ফল-মূল ও আমিষজাতীয় খাদ্য প্রাধান্য পাবে বেশি ।
দৈহিক ওজন বা বিএমআই বিবেচনায় রেখে রোগীদের শারীরিক শ্রমের ব্যবস্থা করতে হবে।\
* যেমন মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত পিলগুলো যাতে খুব কম মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন থাকে , তা সহায়ক ওষুধ।
১.আরো রয়েছে মেটফরমিন
২.এছাড়া অবাঞ্ছিত লোম দূর করার ক্রিম
৩. আর প্রজনন সম্ভাবনা বৃদ্ধির ওষুধ
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে অধিকাংশই এ সমস্যার শারীরিক লক্ষণ গুলো খুব দ্রুত বুঝতে পারেন না তারা । কেউ কেউ এর লক্ষণ গুলো বুঝতে পারলেও সংকোচ বোধের কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করে ফেলে ।
যেহেতু এই রোগটির ব্যাপকতা ও সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য ঝুঁকিও আছে, তাই প্রজননক্ষম বয়সের সব নারীকে তার এই সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য অবশ্যই হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অতি জরুরি।