(Genetic Engineering) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে DNA বা RNA থেকে বংশধারা রক্ষা করে এমন অংশগুলোকে বাদ দেয়া হয় বা কোষের মধ্যে ঢুকানো হয়। কখনো কখনো এতে জেনেটিক মোডিফিকেশনও বলা হয়। এটি প্রাণ রসায়নের এমন একটি শাখা যেখানে জীবনকে অণু-পরমাণু পর্যায়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ১৯৭২ সালে পল বার্গের (Paul Barg) রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজির আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫১ সালে Genetic engineering’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন Jack Williamson’ ‘তাঁর সাইন্স ফিকশন উপন্যাস Dragon’s Island -এ। তাঁর এক বছর আগেই DNA যে বংশগতির বাহক তা নিশ্চিত করেন Alfred Hershey and Martha Chase.
মানব গঠনের সর্বনিম্ন একক কোষ। কোষের ভেতরে জিন (Genes) নামে একটি উপাদান আছে যা মানব গঠনের মূল বলা যায়। জিন বংশপরম্পরায় মানবের গঠন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। মানবের স্বাভাবিক গঠন কীভাবে পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে বিকশিত হবে তাও এ ধরনের প্রযুক্তি থেকে জানা যায়।
একইভাবে অন্যান্য প্রাণীতেও জিন থাকে, উদ্ভিদেও জিন থাকে। এসব জিন প্রাণী ও উদ্ভিদের গঠন বৈশিষ্ট্য, ওজন, পুণাগুণ ইত্যাদি প্রকাশ করে।প্রকৃতিতে নতুন জিন সৃষ্টির জন্য সেক্সের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয়। পুরুষ ও মহিলা সেক্সের জিন পরস্পর সংমিশ্রণে নতুন জিন উদ্ভব হয়।
একটি বাদামি রঙের গাভী হলুদ রং ষাঁড়ের সাথে সেক্স বিনিময়ে অন্য রঙের গাড়ী উৎপাদন করে। এক্ষেত্রে জিন গঠন প্রকৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
জেনেটিক প্রযুক্তি বহু সেক্টরে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষভাবে গবেষণা খাতে, কৃষিতে, শিল্পের ক্ষেত্রে এবং মেডিসিন খাতেই বেশি ব্যবহৃত হয়।
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। গাভীর হাইব্রিড উৎপাদন এবং এর বেশি দুধ প্রাপ্তিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহৃত হয়। বিশেষ ধরনের এনজাইম তৈরি করে মানবের হরমোন তৈরি করা হচ্ছে যাতে মানবশিশু জন্মানোর অক্ষমতা দূর করা যায়
। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে জেব্রাফিস তৈরি করা হয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবহারের ফলে কৃষিখাতে পশুপালন, মৎস্য চাষ ও বনা ঘাতের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।
মাংস ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা। কৃষিতে চাল, ডাল, পিয়াজ, রসুন, ডিম উৎপাদনেও এ খাতের ব্যাপক ভূমিকা আছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ করে ১৯৭৩ সালে ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করা হয়, যার নাম GMO (Genetically
Modified Organism) ব্যাকটেরিয়া।
১৯৭৪ সালে GM ইঁদুর বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। এমন ব্যাকটেরিয়া ১৯৮২ সালে ইনসুলিন তৈরি করে। ১৯৭৬ সাল থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা তৈরি খাবার বাজারে পাওয়া যেতে থাকে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি কৃষি, বায়োটেকনোলজি, ওষুধ তৈরি, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবহার হয়। বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বারা উৎপাদিত ফসল বাণিজ্যকভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে।