Shakchunnir Golpo | একটি ভয়ঙ্কর শাকচুন্নির গল্প
একদিন এক সদ্য বিবাহিত ব্রাহ্মণ পত্নী পুকুর স্নান সারতে যাচ্ছিল। ওই পুকুরপাড়ে ছিল একটি কদমগাছ। সেই গাছে বাস করত এক শাকচুন্নি। ব্রাহ্মণপত্নীকে আসতে দেখে সে সাদা কাপড় পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল। ব্রাহ্মণত্নী শাকচুন্নিকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় অসাবধানতায় তার শাড়ির আঁচল শাকচুন্নির গায়ে লাগল।
আর যায় কোথায়! শাকচুন্নি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। ব্রাহ্মণপত্নীকে পাঁজাকোলা করে কদমগাছের ঘরে বন্দি করে রাখল।
নিজে ব্রাহ্মণপত্নীর বেশে ব্রাহ্মণের বাড়িতে উপস্থিত হল। থাকার মধ্যে ব্রাহ্মণের বাড়িতে বৃদ্ধা মা আর সদ্য বিবাহিত বউ। নতুন বউয়ের সঙ্গে বৃদ্ধার সবসময়ই খিটিমিটি লেগে আছে। মেয়েটা চটপটে নয়। কিন্তু সেদিনের পর থেকে বৃদ্ধা খুব খুশি, হাফ ছেড়ে বাঁচল। মনে মনে ভাবল, যাক, এতদিনে তাহলে বউমার সুমতি হয়েছে।
একদিন বৃদ্ধা উঠোনে বসে রান্না করছিল। ছদ্মবেশী শাকচুন্নি বারান্দায় বসে চাল ঝাড়ছিল, বৃদ্ধা বলল, ‘বউমা, ভাড়ারঘর থেকে একটা বাটি এনে দেবে? ছদ্মবেশী শাকচুন্নি বলল, দিচ্ছি মা।
এই বলে শাকচুন্নি বারান্দা থেকেই হাত বাড়িয়ে ভাড়ারঘর থেকে বাটি তুলে নিল। ভেবেছিল বুড়ি চোখে কম দেখে, কিছুই দেখতে পাবে না। বুড়ি কিন্তু দেখতে পেয়েছিল। এই কাণ্ড দেখে আতঙ্কে সে প্রায় জ্ঞান হারায়।
একটু সুস্থ হয়ে ভাবল, নিশ্চয় তার বউমাকে ভূতে ধরেছে। সে তখন বউমাকে কিছু বলল না। রাতে ছেলে বাড়ি ফিরে এলে, আড়ালে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে ছেলে তাে ভয়ে অস্থির। ছেলে মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘ভয় পেলে চলবে না। যদি জানতে পারে
ভয় পেয়েছি, ঘাড় মটকে চলে যাবে। কয়েকটা দিন চুপচাপ লক্ষ করতে হবে, তারপর যা করার করা যাবে। কয়েকদিন পর একদিন বৃদ্ধা বলল, ‘বউমা, শরীরটা ভাল নেই। আজ বাপু তুমিই রান্না করাে। ওই বাড়ির গােয়ালাদের কাছ থেকে আগুন নিয়ে উনুন ধরাও। ছন্নবেশী শাঁকচুন্নি ‘আচ্ছা’ বলে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। বৃদ্ধা উঠোনে বসে বিশ্রাম করছে।
অনেকক্ষন পর বৃদ্ধা ভবল, কই তার বৌমা এখনতো আগুন নিয়ে এলো নো।!
সেই যে রান্নাঘরে ঢুকেছে আর বেরুবার নাম নেই! একবার দেখে আসি। এই ভেবে বৃদ্ধা রান্নাঘরের জানালায় চোখ রাখতেই হতবাক হয়ে গেল।
দাউদাউ করে উনুন জ্বলছে।
উননে ভেতরে তার বউমা পা ঢুকিয়ে বসে আছে। বৃদ্ধা আর একমুহূর্ত দেরি করল না। ডেকে নিয়ে এল ছেলেকে। সব দেখে ছেলের ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। বৃদ্ধা বলল, ‘বাছা, এক্ষুনি ওঝা ডেকে এই সর্বনাশীকে বিদায় কর, নয়তাে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ছেলে ওঝা ডেকে নিয়ে এল। সমস্ত ঘটনা শুনে ওঝা একটা পােড়া হলুদ ছদ্মবেশী শাকচুন্নির নাকের সামনে ধরতেই সে চিৎকার করে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম করল।
সঙ্গে সঙ্গে ওঝা চুলের মুঠি ধরে বল্ল, বল তুই কে? শাঁকচুন্নি চিৎকার করে বলতে লাগলো আমায় ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও।
ওঝা একটা ঝাটা নিয়ে মারতে লাগল আর বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগল। শাকচুন্নি এক সময় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, বলছি, আমি পুকুরপাড়ের
কদমগাছে থাকি। শাঁকচুন্নি।
এই ব্রাহ্মণের বাড়িতে এলি কী করে? ব্রাহ্মণের বউকে সরিয়ে রেখেছি কদমগাছের
আমি এক্ষুনি তাকে ছেড়ে দিচ্ছি।
ফাটলে। আমাকে ছেড়ে দাও।
ওঝা বেধড়ক মারতে মারতে বলল, শুধু তাকে ছাড়লে হবেনা। এই কদমগাছ।
ছেড়ে তােকে চলে যেতে হবে।
শাকচুন্নি ওরে মাগো বাবাগো ‘ বলে চিৎকার করতে করতে বলল, তাই হবে, আমি আর এই মুল্লুকে থাকব না। তুই ছেড়ে গেছিস, আমরা কী করে বুঝব? যাওয়ার সময় কদম গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে দিয়ে যাবে।
যাওয়ার সময় কদমগাছের একটা ডাল ভেঙে দিয়ে যাবে।
ওঝা তখন শাঁকচুন্নির মুক্তি দিল। ব্রাহ্মণ পড়শীদের নিয়ে, তার বউকে সবাই দেখল কদমগাছের একটি ডাল ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। তারপর থেকে ব্রাহ্মণ তার মা এবং বউকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে লাগল।
উদ্ধার করল। অনাহারে কঙ্কালসার দেহ হয়েছে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে!